বিয়ানীবাজারে করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবে ঈদের আগ পর্যন্ত যেখানে জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও বিত্তাশালীদেরকে তীব্র প্রতিযোগিতার মধ্যে অর্থ ও খাদ্য সহায়তা প্রদান করতে দেখা গেছে। তবে এই দুর্যোগ উত্তরণ চেষ্টার জরুরী সময়টায় তাদেরকে প্রকৃত কোনো ভূমিকা নিতে দেখা যাচ্ছে না। অন্যদিকে, দূর্যোগকালীন এমন পরিস্থিতি উত্তরণে মানবিকতার অনন্য এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে বিয়ানীবাজারের ৬ বছর বয়সী শিশু সাদাত এবাদ। সে মহামারি করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় প্রায় ৩ বছর থেকে নিজের মাটির ব্যাংকে জমানো ৬ হাজার টাকা করোনা পরীক্ষার কীট কিনতে স্বাস্থ্য বিভাগকে দান করেছে। তার দানকৃত এ টাকা করোনা পরীক্ষার ২’শ কীট কেনা যাবে।

মানবিক দৃষ্টাটান্ত স্থাপন করা ওই শিশুটি বিয়ানীবাজার পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও খাসা এলাকার বাসিন্দা এবাদ আহমদের ছেলে। সাদাত এখন দি লাইটহাউস একাডেমিতে নার্সারী শ্রেণীতে অধ্যয়নরত।

বৃহস্পতিবার (৪ জুন) সন্ধ্যায় বিয়ানীবাজার পৌরসভার মেয়র মো. আব্দুস শুকুরের কার্যালয়ে বাবার সাথে আসে সাদাত এবাদ। এসময় তার জমানো টাকাগুলো পৌর মে‍য়রের কাছে হস্তান্তর করে সে। পরে সাদাত এবাদের এমন মহতী উদ্যোগে অভিভূত হয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি পোস্ট প্রকাশ করেন মেয়র মো. আব্দুস শুকুর।

ছবিসহ প্রকাশ করা পৌর মেয়রের ওই পোস্টে লিখা ছিল- ‘মহামারি করোনা ভাইরাস (কভিড -১৯) মোকাবেলায় তিন বৎসর যাবৎ মাটির ব্যাংকে জমানো টাকা দান করলো সাদাত এবাদ তুর্য। সে নমুনা পরিক্ষার জন্য ২০০ কিট এর সমমূল্য ৬ হাজার টাকা দান করেছে। ছয় বছর বয়সে সাদাত এবাদ তুর্য’র এই প্রয়াস অনেক বড়। সে আজ আমার কার্যালয়ে এসে তার সঞ্চয় কৃত টাকা হস্তান্তর করে। আমি তার উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ কামনা করছি।’

এরপর পৌর মেয়র মো আব্দুস শুকুরের ওই ফেসবুক পোস্ট মুহূর্তেই ভাইরাল হয়ে পড়ে। শিশু সাদাতের এমন মানবিকতার ছবি মুগ্ধ হয়ে তার প্রশংসা করে মেতে ওঠেন অনেকেই। অনেকেই লিখে সাদাতের এমন মহতী কাজকে অনুপ্রেরনা উল্লেখ্য করে ফেসবুকে পোস্ট প্রকাশ করেন।

রাজধানী ঢাকার ব্যবসায়ী শাব্বির আহমদ বকসী তার ফেসবুক টাইমলাইনে লিখেছেন- ‘আমরা তো সমালোচনা নিয়ে ব্যস্ত, আর এই ছয় বছর বয়সী সাদাত এবাদ আমাদেরকে শিক্ষা দিল ৩ বৎসর যাবৎ মাটির ব্যাংকে জমানো টাকা( কিট) কেনার জন্য দান করলো সাদাত এবাদ।’

বিয়ানীবাজার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আরএমও ডা. আবু ইসহাক আজাদ ফেসবুকে এক মন্তব্যে বলেন, ‘প্রিয় ভাতিজা সাদাত, মাত্র ছয় বছর বয়সে তোমার এই মানবিক চিন্তা আমাদেরকে অভিভূত করেছে আর লজ্জায় ফেলেছে আমাদের বহুজনকে। দোয়া করি আল্লাহ তোমাকে সুস্বাস্থ্য আর নেক হায়াত দান করুন। বেড়ে উঠো মানবিক মানুষ হয়ে আর গড়ে তুলো আমাদের জন্য এক মানবিক সমাজ।’

বিয়ানীবাজার সরকারি কলেজের সহযোগী অধ্যাপক মাহফুজা খানম, বিয়ানীবাজার প্রেসক্লাব সভাপতি আতাউর রহমান, কবি তমিজ উদ্দিন লোদী, বিয়ানীবাজার উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক আবদুল কুদ্দুছ টিটু, প্রকাশক মোস্তফা সেলিম, যুক্তরাজ্য প্রবাসী কমিউনিটি নেতা দেলোয়ার হোসেন, কবি আব্দুল হাছিবসহ অনেকেই ফেসবুকে সাদাত এবাদের এমন উদ্যোগে অভিভূত হওয়ার কথা প্রকাশ করেছেন। তারা সকলেই তার উজ্জ্বল ভবিষ্যত কামনা করেন।

এদিকে, নিজের সন্তানের এমন মহতী কর্মে গর্বিত সাদাতের বাবা এবাদ আহমদ। নিজের অনুভূতি জানিয়ে ছেলের জন্য সকলের কাছে দোয়া চেয়েছেন তিনি। তিনি বলেন, আমার ছেলে মানুষকে সহযোগিতা করার জন্য ইচ্ছে পূষণ করে তার অর্থ হস্তান্তর করেছে। বাবা হিসেবে আমার ছেলে আমাকে গর্বিত করেছে।

‘এবি টিভি’র সর্বশেষ প্রতিবেদন-